১৫ বছর ধরে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতার ভিত্তি নষ্ট করা হয়েছে - বাণিজ্য উপদেষ্টা

১৫ বছর ধরে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতার ভিত্তি নষ্ট করা হয়েছে  - বাণিজ্য উপদেষ্টা

 

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, সরকারি-বেসরকারি সব ক্ষেত্রেই গত ১৫ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার ভিত্তি ভেঙে ফেলা হয়েছে। স্থানীয় শিল্পের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে এবং বাজারের স্বাভাবিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতাও নষ্ট করা হয়েছে।  

আজ হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘বাংলাদেশে প্রতিযোগিতা নীতি: সম্ভাবনা, প্রতিবন্ধকতা এবং এগিয়ে যাওয়ার পথ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

 

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ক্ষমতায় এসে আমরা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলেও কিছু ভালো পদক্ষেপে এখন দেশের রেমিটেন্স ও রপ্তানিতে সুদিন এসেছে। ধীরে ধীরে অন্যান্য ক্ষেত্রেও সফলতা আসছে। তিনি বলেন, পনেরো বছরে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ফলে আমাদের ক্রনিজ (ঘনিষ্ঠ বন্ধু দল) তৈরি হয়েছে। সম্পদের অসম্ভব রকম অসম বণ্টন তৈরি হয়েছে এবং এ অসম বণ্টন এমন কিছু ক্রনিজ তৈরি করেছে যারা মার্কেটে নতুন প্রতিযোগীকে প্রবেশে বাধাগ্রস্ত করছে। 

 

এসময় তিনি বলেন, অন্য সব প্রতিষ্ঠানের মতো প্রতিযোগিতা কমিশনের সক্ষমতাও ধ্বংস করা হয়েছিল। যে কারণে সাধারণ মানুষ খুব বেশি সুফল পায়নি। দেশের মানুষ তাদের প্রত্যহিক জীবনে প্রতিযোগিতার সুফল দিতে হলে এ কমিশনকে সে জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিতের তাগিদ দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, অনেক অসাধু প্রতিষ্ঠান বাজারে যোগসূত্র তৈরি করে ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। প্রতিযোগীদের দমিয়ে রাখতে কম দামে পণ্য বিক্রি করে তাদের ধ্বংস করছে। প্রতিযোগিতা কমিশনকে দোষীদের শাস্তি দিতে হবে।

 

শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, যারা ভোক্তাদের জিম্মি করে, সরকারকে ভ্যাট-টাক্স ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে উপার্জন করছে তাদের বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ দরকার। ব্যবসায়ীদেরও দেশের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে। বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার চর্চা ও দেশের সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন করতে হবে।

 

প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মইনুল খান ও বাংলাদেশে ইউএনডিপির উপ আবাসিক প্রতিনিধি মিজ সোনালি দয়ারাত্নে।

 

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ৫/৬টি প্রতিষ্ঠান একই উৎস থেকে পণ্য ক্রয় করে এবং বাজারজাত করে। তাদের খরচও মোটামুটি একই রকম হওয়ায় বাজারে খুব বেশি প্রতিযোগিতা দেখা যায় না। বর্তমান সরকার বাজারকে প্রতিযোগিতামূলক করতে পদক্ষেপ নিচ্ছে।

 

প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, প্রতিযোগিতা কমিশন শুধু কোম্পানিগুলোকে জরিমানা করে না, সুরক্ষাও দেয়। ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান যারা বাজারে অসম প্রতিযোগিতায় পড়ছে, তাদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করছি। গুটিকয়েক কোম্পানির সিন্ডিকেট ভেঙে সব কোম্পানিকে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার সুযোগ করে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।

 

বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) যৌথভাবে এ সেমিনার আয়োজন করে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিসার্চ এন্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন কমিশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক।

 

প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. এ কে এনামুল হক, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য (আইন) ড. আফরোজা বিলকিস, ফরেন কমনওয়েলথ এন্ড ডেভলপমেন্ট অফিসের ইকনোমিক অ্যাডভাইজর ইসাম মোসাদ্দেক এবং মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি কামরান টি রহমান।

 

 

 

সূত্রঃপিআইডি